শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ অপরাহ্ন

তিস্তার পানি কমলেও বাড়ছে ভোগান্তি, বিশুদ্ধ পানির সংকট

তিস্তার পানি কমলেও বাড়ছে ভোগান্তি, বিশুদ্ধ পানির সংকট

 

লালমনিরহাট প্রতিনিধি।।
উজান থেকে নেমে আসা পাহারি ঢল আর বৃষ্টিপাতে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর বিপদ সীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রণের ব্যারাজে ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে তিস্তা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যার্ত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষ। পাশা পাশি গো-খাদ্য চরম সংকট দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার গত দুইদিন ধরে পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

আজ শনিবার  (১৫ জুলাই) বিকেল ৩ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২দশমিক ১২সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)।
এর আগে গত শুক্রবার তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা চর অঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে গত দুইদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব অঞ্চলের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। রাস্তাঘাটে পানিতে তলিয়ে গিয়ে চলাচলের কষ্টকর হয়ে পড়ছে। এদিকে নিজ উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা মুড়ি ও গুড় পরিবারের জন্য বিতরণ করেছেন।

তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানি কমতে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে তিস্তা পারের মানুষ।

এদিকে বন্যার্তদের মাঝে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল নিজ উদ্যোগে তিনশত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাতীবান্ধা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন,কুটি মারি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন ও মহিলার সংরক্ষিত আসনের শেফালী বেগম।

পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানিতে প্রায় দুইশত পরিবার পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার দহগ্রাম এলাকার গুচ্ছগ্রাম যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি ভেঙে যায়। এতে একশত টি পরিবারের চলাচল খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ছে।

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, দহগ্রামের তিস্তার তীরে যদি বেরিবাধ করা হতো তাহলে আমাদের এই দহগ্রামে তিস্তার পানির প্রবেশ করতো না আমরা নিরাপদে থাকতাম। তিনি আরো বলেন,দহগ্রামের তিস্তা তীরে অপরিকল্পিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে কাজ করছে তা ভেস্তে গেছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, গড্ডিমারি ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত এলাকা তিস্তার পানি বাড়ার সাথে সাথে গড্ডিমারির এলাকায় প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। চরের মানুষ প্রায় তিন দিন ধরে পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানি বন্ধিদের জন্য মুড়ি ও গুড় বিতরণ করা হয়।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন বলেন, বন্যার্ত পরিবার গুলোর সব সময় খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে হাতীবান্ধা উপজেলার জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল ও এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে দ্রুত বিতরণ করা হবে

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, বন্যার্ত পরিবারদের মাঝে ৪৫০ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পাঁচ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বন্যার্তদের মাঝে চাল ও নগদ টাকা বিতরণ চলছে।

তিনি আরো বলেন,বন্যার্তদের খোঁজখবর নিয়ে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT